জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় ঘুমের ঘরে নৃশংস হামলা, ঘরবাড়ী ভাঙ্গচুর, মালামাল লুটপাট ও ভিটেমাটি বেদখলসহ আহত -৪ বলে অভিযোগ তুলেছেন এক এতিম পরিবার।
নির্যাতিত পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মাদারগঞ্জের উপজেলার ৭নং সিদুলী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের চর ভাটিয়ান মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত জহর আলী ছেলে হাবিলের সাথে এ ঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনা সম্পর্কে সরজমিনে গিয়ে এলাকাবাসী কাছে জানা যায়, হাবিলের বাবা জহর আলী ছিলেন একজন ঘরজামাই। তার পিতার সাংসারিক অবস্থা ভাল না থাকায়, সে বিয়ে করে শশুড়বাড়ীতে চলে আসেন। কিন্তু একদেড় বছরের মাথায় যখন হাবিলের জন্ম হয়। তখন ৩-৪ মাস বয়স রেখে হাবিলের বাবা জহর আলী স্ত্রী ও সন্তান ফেলে শশুবাড়ী হতে পালিয়ে যান। এর কিছুদিন পর হাবিলের মা হুরমতি বেগম স্বামীকে খোঁজার জন্য বাড়ী থেকে বের হলে তিনি আর ফিরে আসেন না বলে জানান হাবিলের অন্ধ নানী আয়শা বেগম।
এদিকে আয়শা বেগম আরও বলেন হাবিলকে ওর বাবা-মা ৬-৭ মাস বয়স রেখে দুজনেই যখন নিরুদ্দেশ হলেন, তখন আমি কিভাবে এই অনাথ অসহায় মাতৃদুগ্ধ বঞ্চিত শিশুটিকে লালনপালন করেছি তা একমাত্র মহান আল্লাহতালা’ই জানেন। এদিকে হতভাগা হাবিলের বয়স যখন ৬ বৎসর পূর্ণ হয়, তখন তার নানা আছর আলী শেখ মারা যান। আর তখন হতেই শুরু হয় হাবিলের কর্মজীবনের যুদ্ধ। কেননা হাবিলের আপন ২ মামা থাকলেও, তারা ছিলেন শারীরিক প্রতিবন্ধী। বড়জন অন্ধ ছোটজন পাগল। তাই হাবিলের নানী আয়েশা বেগম স্বামী মৃত্যু, ছেলেদের অক্ষমতা, মেয়ে ও জামাই হারানো বুকভরা কষ্ট নিয়ে নিঃশব্দে পাঁজর ভাঙ্গা কান্নায় কেঁদে বেড়াতেন সর্বত্র। যার ফলশ্রুতিতে একসময় সে অন্ধ হয়ে যায় বলে জানান এলাকাবাসী। প্রত্যক্ষ সূত্রে আরও জানা যায়, হাবিলের নানী আয়শা বেগম প্রায় ৩০ বছর যাবৎ অন্ধ। আর এই অন্ধ অসহায় মানুষটির সেবাযত্ন ও ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করে আসেন এতিম হাবিল বলে জানান গ্রামের শতশত মানুষ। হতভাগা আয়শা বেগম এতিম নাতিনের প্রতি খুশি হয়ে ২ শতাংশ জমি লিখে দেন তার নিজেস্ব সম্পত্তি হতে এবং সেই জায়গাতেই হাবিল ছোট্ট একটি দুচালা ঘর তুলে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছেন। কিন্তু হাবিলের নানার চাচাতো ভাই মৃত আমির উদ্দিনের ছেলেমেয়েদের অমানুষিক নির্যাতন ও অত্যাচারে হাবিল আজ দিশেহারা অসহায়। কেননা হাবিলের পক্ষে প্রতিবাদ করার মত তার আপনজন বলতে কেউ নেই। যারা আছেন তারা সকলেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। সেই সুযোগে পড়শি মামাতো ভাই মোস্তফা গুটু ও গুটুর মা মুসলেমা বেগম, ভাই মুকুল মিয়া,বোন নাজমা খাতুন, স্ত্রী শান্তি বেগমসহ দুইমেয়ে জেসমিন ও শাবনূর সর্বদাই হাবিলের উপর অমানবিক নির্যাতন চালায় বলে জানা যায়। কিছুদিন পূর্বেও এই কুচক্রী পরিবারটি এতিম হাবিলের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে গ্রেফতার করায় এবং দুইদিনব্যাপী অমানবিক নির্যাতন করায় পুলিশের মাধ্যমে। হাবিলের এমন অসহায়ত্ব দেখে গ্রামের লোকজন বাড়ী বাড়ী থেকে চাল ও টাকাপয়সা তুলে হাবিলকে জামিন করে নিয়ে আসে কোর্ট থেকে। এদিকে উক্ত বিষয়টি নিয়ে এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা কয়েকবার শালিস বসে মীমাংসা করে দিয়েছেন বলে জানান হাবিল। হাবিল আরও বলেন গত ৪ আগস্ট মঙ্গলবার ভোররাতে গুটু ও তার পরিবারের লোকজন মিলে হত্যার উদ্দেশ্য অতর্কিত ভাবে হামলা করে হাবিল ও তার পরিবারের উপর। হাবিল জানান তার ঘরবাড়ী ভাঙ্গচুর,লুটপাটসহ ভিটামাটি বেদখল করেছে গুটু গং। বর্তমানে আহত হাবিল ও তার স্ত্রী নাসরিন বেগম এবং মামাতো ভাই শিপন ও মিঠু সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা যায়। এবিষয় শ্যামগঞ্জ কালীবাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্ব প্রাপ্ত অফিসার এস আই শফিকুল আলম বলেন, এখনো কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে।